Poems by Shahriar Shafiq

Poems inspired by the working sites of Uronto in the second episode of residential art exchange program in Kishoreganj, Bangladesh by participating artist and writer Shahriar Shafique.

POEM 01 – UNTITLED

জানি, আমার জীর্ণ-স্যাঁতসেতে কোঠর,
অস্থি চর্মসার শ্রীহীন সেঁকেলে মুখ,
আঁধার অন্দর, আর বাইরে ক্ষয়ে যাওয়া পলেস্তারা
তোমাকে টানে না আর।

এও জানি, দূর্ভিক্ষে ঠেলে ওঠা কণ্ঠার হাড়ের মত কার্নিশ,
আর বিগত যৌবনার মতো নুয়ে পড়া অবয়ব আমার
তোমার সমাদর পাবার যোগ্য নয় এতটুকু।
তাই আমাকে অবহেলায় ফেলে রেখে
ডাসা যৌবনবতী, চটুল আর আনকোরা শরীর,
হালফ্যাশনের রঙে রঞ্জিত  
মোহময়ীর স্বপ্ন আঁকো তোমার দু’চোখে।

জানি তুমি গেছো ভুলে-
আমারও অমন ডলডলে যৌবন ছিলো,
অন্দরে স্রোতস্বিনীর মত কোলাহল ছিলো,
আমারও রূপ ঠিকরে বেরোত হাজারো আলোর ফোয়ারা তুলে।
না হয় কালের ফেরে আমার যৌবন নিরুত্তাপ
তবু জেনো, আমি ইতিহাস-
কালের সাক্ষী হয়ে নির্নিমেষ বহমান অতীতের এপিটাফ।

কতকাল হতে এই এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আমি দেখেছি-
তোমাদের, তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের নিরন্তর আসা-যাওয়া।
কতকাল, কত যোজনা, কত শাসক-শোষক
দ্রুত পায়ে চলে গেছে আমার সমুখ দিয়া।
দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, আর্য-অনার্যের শঙ্কর জনপদে
কত উৎসব-পার্বণ সারা হলো কত মতে-পথে।

দেখেছি গুপ্ত-পাল-সেনের চিহ্ন মুছে যেতে
পাঠান-মোগলের দ্রুত বেগে ছুটে চলা খুড়ের আঘাতে,
দেখেছি বিলেতি বেনিয়ার শাসন-শোষণ
বেনিয়া জাহাজের ছুটে ফেরা ডান্ডি-কোলকাতা,
ওদের পণ্যের ফেরে-
তোষক বেনিয়া জন্মায় জনপদের এঘরে ওঘরে,
পণ্য-দালালের সিন্দুকে হয় পুঁজির পসার।

মেকলে’র স্বপ্ন বেয়ে বেয়ে
শহর কোলকাতা থেকে কারিগর আসে
দালালের আবাস গড়ে সাহেব রুচিতে,
কখনোবা বলরুমে নৃত্যের ঝংকার ওঠে,
মদের গ্লাসে চলে উষ্ণ চুমুক।

হঠাৎ অশান্ত জনপদ
আর্ত-চিৎকার ভেসে আসে থেকে থেকে
বল্লম-সরকির ঝলসে ওঠা ফলায়
রক্তের দাঁগ লেগে আবার শুকোয়,
প্রাগৈতিহাসিক বঙ্গ দু’টুকরো হয়ে ঝুলে পড়ে দু’দিকে।

সময় বয়ে যায়…
তবু শান্তি ফেরে না জনপদে
অগ্নি-স্ফুলিঙ্গের মত স্লোগান ওঠে দাবী আর অধিকার চেয়ে।
এরই মাঝে দস্যুর চিঠি আসে হলুদ খামে,
কার্নিশ বেয়ে আসে লোভী তস্কর
রত্নের খোঁজে ফেরে মন্দির, সিন্দুক, লুকানো থামে।
এসবই দেখেছি আমি নীরবে নিয়ত,
দেখেছি আলোর রোশনাই ছোটে পূজা-পার্বণে,
আনন্দ কোলাহল বাজে দেয়ালে দেয়ালে।
আবার মুছে যায় পাঞ্জাবী মিলিটারীর দাতব গর্জনে,
কত তাজা প্রাণ ঝরে যায় মাঠে-ময়দানে,
বন্দীর ক্লেষিত মুখ টর্চার সেলে।

সব পেছনে ফেলে প্রাণের তরঙ্গ বাজে আবার,
নবীন স্বপ্ন ভাসে গৃহস্থের চোখে,
কপালে সিঁদুর আঁকা হয়, উঁলুধ্বণি ওঠে
গৃহিনী সান্ধ্য পূজার ঘরে
সমর্পিত করে নিজেরে বিশ্বপতির তরে;  
তবু ঘোচে না বিরোধ
ক্ষোভ পুঞ্জিত শরীকের দাবি ওঠে আদালতে-
দাঁগ কষে ভাগ হয় শরীর আমার,
ভাগ হয় জীর্ণ চিলেকোঠা, অলস পড়ে থাকা সিঁড়ি-চাতাল,
দু’ধারে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের দেয়াল।
সব কিছু ভাগ হয়ে যায়
তবু আমি বয়ে চলি স্মৃতি অক্ষত-
হাজার বছর ধরে শিরার ভেতর শোনিতের মত,
বিগত যৌবনা জীর্ণ শরীর আমার
তবু আমিই এপিটাফ- নির্নিমেষ
কালের সাক্ষী হয়ে বয়ে চলি পূর্বসূরীর ইতিহাস।

নবীনেরে দাও স্থান, ভরাট যৌবনের গান হোক;
কিন্তু এইসব বয়ে যাওয়া সময়- গ্রাস করেছে যদিও কালের গহবর,
এইসব অক্ষত স্মৃতি, পূর্বসূরীর ইতিহাস
কীভাবে করবে অস্বীকার!

– শাহরিয়ার শফিক

POEM 02: UNTITLED

কিশোরীর অবাক চোখের মত অবাক সময় একদা এসেছিলো এখানে,
এই ধূলি-ধূসর, ক্ষয়ে যাওয়া মঠের প্রাঙ্গণে;
তরুণী চোখ অবাক বিস্ময়ে সেদিন চেয়েছিলো সুদূরে- বেহুলার যাত্রা পানে
বেহুলার মতো চোখে তাঁর ঝরেছিলো আঁকুতি নীরব,
কবির কণ্ঠ চিরে সে আঁকুতি মিশেছিল হাওয়ায় হাওয়ায়,
আকুল মন তাঁর চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গায় ভর করে
ভিঁড়েছিলো কত দেশ কত বন্দরে,
বেহুলার সাথে লখীন্দরের শব বয়ে সেও বুঝি ভেসেছিল গাঙ্গুরের জলে,
ইন্দ্রের সভায় বেহুলার নৃত্যের মতো কবির কণ্ঠ তখন নৃত্যের ঝংকার তোলে;
এই উঠোনের প্রদীপ-শিখায় তরুণীর মুখে সেদিন ফুটেছিলো তৃপ্তির রেখা-
লখীন্দরে ফিরে পাওয়া বেহুলার পূর্ণকাম মুখ যেন তাঁর।
সময়ের ফেরে আজ এই প্রাঙ্গন ক্ষয়ে গেছে-
তবু পৌষ-রাতের কুয়াশার ভাঁজে ভাঁজে সেসব ক্ষণ নীরবে জমে আছে।

কোন এক হেমন্তের রাতে এ প্রাঙ্গণ ভেসেছিলো আবার
মরমী কবির কণ্ঠে কৃষ্ণকীর্তনের সুরে,
কবির কণ্ঠ ফুঁড়ে সে সুর কৃষ্ণের বাঁশি হয়ে ঝরে।
ও সুরে রাধা নয়, আকুল হয়েছিল হায় কিশোরীর মন
চোখ জুড়ে ছেয়েছিলো রাখাল প্রেমিক আর কদমের বন,
মিলনের স্বপ্নে বিভোর দু’চোখ তখন।
ফাল্গুনী পূর্ণিমায় কৃষ্ণের দোলের মতো দাপর যুগ ফিরে ফিরে আসে যেন
দোলা দেয় উঠোন ঘিরে থাকা শ্রোতাদের মনে-
এমনই নীরবে বয়ে গেছে কত যে সময়
তবু সব কথা জমে আছে এই এখানে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের প্রাঙ্গণে।

কত যুগ ধরে এই ভাঙ্গা মঠ এমনই বয়ে চলে স্মৃতি অবিরত
এখানে ভাঙ্গা দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে জমে আছে মথুরা, কপিলাবস্তু, লঙ্কার ক্ষত
হয়তো কোন এক ভরা বৈশাখের রাতে
ভিজে উঠেছিলো কোন রমনীর চোখ
বুকের তলদেশ থেকে উঠে আসা ভারী অশ্রুপাতে
হয়তো রামের নির্বুদ্ধিতা কিংবা সীতার নিয়তির ফেরে
এই আঙ্গিনায় জ্বালা মশালের আলো উত্তাপ জ্বেলে ধীরে ধীরে
সীতার চিতার অগ্নিকুণ্ডের মত এসে বিঁধে
সমবেত শ্রোতাদের গায়ে, কেউবা আগুন মাড়িয়ে সীতার চলে যাওয়া দেখে
ধরণীর বুকে কিবা আরও আরও দূরের স্বর্গলোকে।

এমনই কত গল্প-গান, কত কাহিনী-আলাপে
ভেসে গেছে এই প্রান্তর কতদিন কত ভক্ত-শ্রোতার মুগ্ধ হাসি কিবা আকূল বিলাপে;
এ আঙ্গিনার ওপর দিয়ে
কত দিন কত ক্ষণ বয়ে গেছে আমার ক্ষয়ে যাওয়া প্রান্তের মত,
নুয়ে পড়া মঠের মতো কত মুহুর্ত পড়েছে নুয়ে,
সেসব কান্না-হাসি মিশে আছে এইসব জংধরা দেয়ালের গায়ে,
সেসব গল্প-গান শেকড় ছড়ায় দেয়ালে-ছাতের গায়ে ছড়ানো বটের শেকড়ের মত,
সেসব মুহুর্ত আজো জমে আছে বিবর্ণ ধুলির মতো স্মৃতির কোনায় কোনায়-
আমার ক্ষয়ে যাওয়া প্রাঙ্গনই এভাবে বয়ে চলে তোমার আমার আমাদের পরিচয়।

– শাহরিয়ার শফিক

Title: Poems by Shahriar Shafiq
Artist: URONTO Collectives
Time and place: Second Episode of UORNTO Residential Art Exchange Program at Kishoregonj 2013.

Content developed by Towhid Islam Khan 
(URONTO artist Community)

No Comments

Post A Comment